"ভেতরের গল্প: গরুর পেট কি সত্যিই চারটা?" — এক এনাটমি ক্লাসের হাসির দিন!
DVM পড়া মানেই প্রতিদিন সিরিয়াস বই, রোগের নাম, ইনজেকশন, সার্জারি — শুধু কি তাই? মোটেও না! মাঝে মাঝে এমন কিছু মজার বিষয় ও অভিজ্ঞতা আসে, যেগুলো আমাদের হাসায়, ভাবায় আর শেখায়ও। আজ বলছি তেমনই এক ক্লাসের কথা — “Ruminant Stomach” নিয়ে Anatomy ক্লাস!
ক্লাস শুরুর আগেই কনফিউশন: গরুর কয়টা পেট?
আমরা তখন ১ম বর্ষের ছাত্র। নতুন নতুন DVM লাইফে ঢুকেছি। হোস্টেল লাইফ, নতুন বন্ধু, ক্লাসের ভয় — সব মিলে একেবারে নতুন একটা জগৎ। সেদিনের বিষয় ছিল "Comparative Anatomy of Digestive System"।
স্যার ক্লাসে ঢুকেই প্রশ্ন করলেন —
> “তোমরা কী জানো, গরুর কয়টা পেট?”
আমরা চুপ... একজন একটু সাহস করে বলল, “স্যার, চারটা।”
স্যার বললেন, “আরে! গরুর কি চারটা পেট? না কি একটা পেটের মধ্যে চারটা ঘর?”
সবাই হা করে তাকিয়ে আছি। এ যেন মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া রুমেনের গ্যাস!
চার পেটের রাজা: গরুর হজম মেশিন
এরপর শুরু হলো মজার এক লেকচার। গরুর হজমব্যবস্থা হলো এক মহা কারখানা — যেখানে ধাপে ধাপে খাবার প্রক্রিয়াজাত হয়।
গরুর “পেট” আসলে একটা বড় stomach, যার চারটি ভাগ থাকে:
1. Rumen (রুমেন) – ফারমেন্টেশন চেম্বার।
2. Reticulum (রেটিকুলাম) – “হানি কম্ব” স্ট্রাকচার; ধাতব জিনিস আটকে রাখে।
3. Omasum (ওমাসাম) – পানি শোষণ করে।
4. Abomasum (অ্যাবোমাসাম) – আসল পেট (true stomach), যেখানে এনজাইম কাজ করে।
স্যার বললেন, “এই চারটা ভাগ মিলে একটা পেট, কিন্তু কাজ করে চারজন রান্নাবান্নার লোকের মতো!”
রেটিকুলাম ও পেরেক গেলার কাহিনি
সবচেয়ে মজার ছিল রেটিকুলাম নিয়ে গল্পটা। স্যার বললেন,
> “রেটিকুলাম এমন জায়গা, যেখানে গরু ভুল করে খেয়ে ফেলে কাঁটা, পেরেক, তার, এমনকি কয়েনও!”
আমরা হেসে উঠলাম। কে কয়েন খায়!
স্যার বললেন, “তোমরা জানো, অনেক সময় গরুর পেট থেকে সার্জারির সময় এক মুঠো তার বা পেরেক বের হয়। এটাকে বলে Hardware Disease।”
তখন বুঝলাম, রেটিকুলাম হলো সেই জায়গা যেখানে ধাতব জিনিস গিয়ে আটকে যায়, আর সেখান থেকে হার্টে ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য অনেকে গরুর খাবারে magnet দেয় — যেন ধাতব বস্তুগুলো এক জায়গায় আটকে যায়।
বলে কী! গরু খায় চুম্বক?
রুমেন: এক চলন্ত ফারমেন্টেশন প্ল্যান্ট
এরপর কথা এল রুমেন নিয়ে। এই অংশে থাকে লক্ষ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া, যেগুলো ঘাস, খড়, খৈল ইত্যাদি ফারমেন্ট করে সহজে হজমযোগ্য করে তোলে।
স্যার বললেন,
> “রুমেন ছাড়া গরু এক ধান্দাবাজ হজম যন্ত্র!”
এই ফারমেন্টেশনের জন্যই গরু ‘রুমিন্যান্ট’ প্রাণী — মানে যারা একবার গিলে, পরে আবার মুখে তুলে চিবায় (regurgitation)। একে বলে rumination বা “জাবর কাটা”।
তখনই বুঝলাম, সকালবেলা গরু চুপচাপ বসে মুখ নেড়ে কী করে!
গরু আসলে বিজ্ঞান জানে!
স্যার বললেন,
> “প্রাণীরা কত বুদ্ধিমান জানো? রুমেনের ব্যাকটেরিয়াগুলো যদি না থাকত, তাহলে গরু এত কমদামে এত শক্তি পেত না।”
এক ছাত্র বলে উঠল, “স্যার, তাহলে কি গরু ভেতরে একটা মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ল্যাব নিয়ে চলে?”
সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছি!
ল্যাবে গিয়ে পেটের ঘ্রাণ!
পরের দিন প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস। গরুর stomach dissection।
অস্থির একটা গন্ধ! কিন্তু রুমেন দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম — বিশাল বড় এক থলে, যার ভেতর অর্ধ-চিবানো খাবার আর গ্যাসে ভরা।
হঠাৎ এক বন্ধু বলল, “ভাই, এই রুমেন দিয়ে যদি বায়োগ্যাস প্লান্ট বানাই?”
স্যার হাসলেন:
> “সেটাই তো হচ্ছে। রুমেন গ্যাস মানেই মিথেন — এই গ্যাস দিয়ে তোমার চা বানানো যাবে!”
একটা গরুর পেট নিয়ে এমন মজার বিজ্ঞান? সত্যিই শিক্ষার মধ্যে আনন্দ লুকিয়ে থাকে!
শেষ কথা: শুধু পড়া নয়, ভালোবাসা
DVM মানে শুধু অংক, রাসায়নিক নাম বা রোগের ডায়াগনসিস নয়। মাঝে মাঝে এর মাঝেই এমন মজার বিষয় থাকে, যেটা জীবনের মতোই আনন্দময়।
আমরা এখন বুঝি — গরুর পেট মানে “চারটি ঘর”, না যে “চারটি পেট”! আর সেই ঘরগুলো আমাদের শেখায় সিস্টেম, বিজ্ঞান, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে এক অসাধারণ গল্প।
✅ শিক্ষার্থীর জন্য বার্তা:
DVM পড়তে গেলে কিছু জিনিস দরকার:
শেখার আগ্রহ
প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা
হাসতে জানার মন
আর গরুর রেটিকুলামের মতো সব কিছু মনে রাখার গুণ!